তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন ইউপিতে ইফতার মাহফিলের নামে চাঁদার টাকা না দেয়ার কারনে বিএনপির দুই গ্রুপের তুমুল সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার ইফতার মাহফিল থেকে দলবল নিয়ে ইউপির রাতৈল বাজারে ঘটে সংঘর্ষের ঘটনাটি। এঘটনায় উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে চারজনকে গুরুতর অবস্থায় রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। বাকি ৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে অপর পক্ষের দাবি গভীর নলকূপের সেচ দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত ইউপি শ্রম বিষয়ক সম্পাদক রনি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামিল, লেকচার অজ্ঞান অবস্থায় রামেকে চিকিৎসা ধীন । এছাড়াও মুদি ব্যবসায়ী দুরুল, রাব্বানী, শামিউল, সজিব, রুহুল, জনিব ও মিনু। তারা সবাই ইউপি বিএনপির সভাপতি আজাদ, সম্পাদক সাজ্জাদ গ্রুপের কর্মী । অপর গ্রুপ সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের পক্ষের ওলামালীগ নেতা জিয়া মুলভী, ভাই আজিজুল আরেক ভাই সাহাবুল সামান্য আহত হলেও রামেকে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে দাবি করেন ইউপি সভাপতি আজাদ সহ তার পক্ষের নেতা কর্মীর। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অপর পক্ষের সিনিয়র নেতা মফিজ উদ্দিন জানান, আজাদ গ্রুপের রনি, রাব্বানীর সাথে জমিতে সেচ দেয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে মারপিট হয়েছে। সভাপতির গ্রুপের লোকজন আ”লীগ পন্থি। এর আগে চলতি মাসের ১১ মার্চ মঙ্গলবার উপজেলায় পাঁচন্দর ইউনিয়ন ইউপি বিএনপির ইফতার মাহফিলের প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল (অব) শরিফ উদ্দিন কে বরণ করা নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মমিনুল হক মমিন ও ইউপি সভাপতি প্রভাষক মজিবুর রহমান গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরদিন বুধবার চিকিৎসা ধীন অবস্থায় রামেক হাসপাতালে গানিউল নামের বিএনপি কর্মী মারা যান। তার জানাযার নামাজ ও দাফন সম্পন্ন হয় বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টা ১৫ মিনিটের দিকে। জানাযার আগ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ও সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার উপজেলায় ইফতার মাহফিল করতে নিষেধ করেন। কিন্তু সেই নিষেধ কে অমান্য করে মুন্ডুমালা পৌর, কামারগাঁ, বাধাইড়, কলমা ও গত বৃহস্পতিবারে চান্দুড়িয়া তে ইফতার করেন মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন।
জানা গেছে, চান্দুড়িয়া ইউপিতে দুইভাগে বিভক্ত বিএনপি। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন ইউপি সভাপতি আজাদ ও সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে উপজেলা যুবদল নেতা রিমন। গত বৃহস্পতিবার ইউপি বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। ইফতারে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন মফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে রিমন।
ইউপি বিএনপির সভাপতি আজাদ জানান, ইফতারের জন্য রিমন ইউপি ওলামালীগ নেতা জিয়া মুলভী ও আজিজুল এবং সাহাবুলের মাধ্যমে রাতৈল বাজারের মুদি দোকানি দুরুলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু দুরুল চাঁদা না দেয়ার কারনে ইফতার শেষে জিয়া মুলভীর নেতৃত্বে তার মুদি দোকানে হামলা ভাংচুর ও লুট করে। তাদেরকে বাঁধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়। এর মধ্যে চার জনকে আশংকা জনক অবস্থায় রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান শুক্রবারে থানায় এজহার দায়ের করা হবে।
তবে আজাদের অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে জমিতে সেচের পানি দেয়াকে কেন্দ্র করে দুপুরের দিকে মারামারি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছে। গুরুতর চারজনকে রামেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে লেকচার নামের একজনের অবস্থা আশংকা জনক।
এদিকে বৃহস্পতিবারের ইফতারের মঞ্চে পৌর যুবলীগের নেতা কালীগঞ্জ এলাকার মিজাজুর রহমান রনি কে দেখা যায় এবং গুঞ্জন উঠে টাকার বিনিময়ে যোগদানের। তবে রনি জানায় সাবেক ছাত্র দলের সভাপতি মালেক ওই প্রোগ্রামে নিয়ে গেছিল। যোগদান করিনি।
সাবেক ছাত্র দলের সভাপতি মালেক মন্ডল কে ফোন দেয়া হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন জানান, আমি তো তাকে চিনিনা, কখন মঞ্চে ছিল সেটাও নজরে আসেনি। টাকার বিনিময়ে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান প্রশ্নই উঠে না। তিনি আরো জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে অসহায় ৩৩ জন ব্যক্তি ও একটি মাদ্রাসায় ১ হাজার টাকা করে ঈদ উপলক্ষে দেয়া হয়েছে। মঞ্চে যুবলীগের নেতার বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান কে ফোন দেয়া হলে রিসিভ করেননি।
থানার ওসি আফজাল হোসেন কে ফোন দেয়া হলে ডিউটি অফিসার ফোন রিসিভ করেন। তার কাছে সংঘর্ষের ঘটনায় কোন অভিযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিউটি অফিসার জানান, এখনো কোন পক্ষ অভিযোগ করেনি করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।