তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে সেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে পুনর্বহাল করেছেন ডিজিএম রেজাউল করিম খান বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ানের নাম জহিরুল ইসলাম লিটন । সে কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। তার বাড়ি ইউপির মাদারিপুর গ্রামে। তার পিতার নাম জইমতুল্লাহ। লিটনের বিরুদ্ধে বিদ্যুতের কাজের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় সহ কর্মকর্তাকে জড়িয়ে অপপ্রচার করার দায়ে ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চলতি মাসের ১০ এপ্রিল লিটনকে পুনর্বহাল করেছেন সদ্য যোগদানকৃত ডিজিএম। এখবর ছড়িয়ে পড়লে ডিজিএমের বিরুদ্ধে উঠেছে সমালোচনার ঝড়, সেই সাথে তিনি কি স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসন করার জন্যই কি উপজেলায় এসেছেন এমন প্রশ্ন জনসাধারণের। এই লিটন গত ৫ আগস্ট সকালের দিকে সরকারের পক্ষে মিছিল ও সভা করেন বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। তাহলে তারমত পদধারীকে কিভাবে পুনর্বাসন করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর জোনের কর্তা বাবু এমন প্রশ্ন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারীদের । ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পুনর্বাসনের সাথে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। কারন আ”লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় নেতাদের সুপারিশ থাকলেও তাকে স্বপদে বহাল করেননি ওই সময়ের ডিজিএম জহুরুল ইসলাম। তাহলে কিসের বিনিময়ে লিটন কে পুনর্বহাল করলেন এমন প্রশ্ন জনমনে বিরাজমান।
তাকে পুনর্বহালের একটি কপি এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। সেখানে লিখা আছে ২০৮ নম্বর স্বারকে ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে পুনর্বহাল প্রসঙ্গে। সুত্র প্রাপ্তি নম্বর ১০২ তারিখ ১৬/০৩/২০২৪ ইং মোতাবেক আপনার আবেদন পত্র।
উপযুক্ত বিষয় ও সুত্রের আলোকে আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি জহিরুল ইসলাম লিটন রাজশাহী পবিশের একজন ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে অনুমোদন প্রাপ্ত ছিলেন। আপনার দায়িত্ব অত্র পবিশ এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকগনের হাউজ ওয়ারিং সম্পাদন করে সমিতির নির্ধারিত হারে গাহক সাধারণের কাছ থেকে মজুরী গ্রহণ করা।
গত ১২/৯/২০২০ ইং তারিখের স্মারক নম্বর ২৭,১২,৮১৭২,৫৬১,০১২,২০,৪৩০০ মোতাবেক আপনার ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান কাজের অনুমতিপত্র স্থগিত ছিল। সুত্রে বর্ণিত আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে তদন্ত রিপোর্ট এর সুপারিশ মোতাবেক সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মহোদয় আপনার ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান কাজের অনুমতিপত্র পুনর্বহাল করেছেন। ভবিষ্যতে আপনার বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে উক্ত অভিযোগ যাচাই করে অপরাধ প্রমানিত হলে পুনরায় আপনার অনুমতিপত্র বাতিল/স্থগিত করা হবে। এমতবস্থায় অত্র পত্রের মাধ্যমে আপনাকে পুনরায় ভিলেজ ইলেক্ট্রিশিয়ান কাজের অনুমতিপত্র প্রদান করা হল।
এর অনুলিপি দেয়া হয়,
সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার রাজশাহী পবিশ/ সদয় অবগতির জন্য এজিএম (এমএস),রাজশাহী পবিশ,
এজিএম (ওএন্ডএম),তানোর জোনাল অফিস রাজশাহী। ওয়্যারিং পরিদর্শক, তানোর জোনাল অফিস,অফিস /মাস্টার কপি।
পত্রে ১০/৪/২০২৫ ইং তারিখে স্বাক্ষর করেন রেজাউল করিম খান, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার। তবে অনুমতি পত্রে কি কারনে প্রায় ৫ বছর তার কার্যক্রম স্থগিত করা হয় এসব নিয়ে কোন কিছুই বলা হয়নি।
অফিসের একাধিক কর্মচারীরা জানান, লিটন কামারগাঁ ইউপি সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় একাধিক নেতারা সুপারিশ করলেও তৎকালীন ডিজিএম জহুরুল ইসলাম কোনভাবে তাকে পুনর্বহাল করেননি। অথচ স্বৈরাচার সরকারের পতনের কয়েক মাস বদলি হন ডিজিএম জহুরুল ইসলামের। তার জায়গায় আসেন রেজাউল করিম খান। তিনি এসেই সেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে পুনর্বহাল করলেন। তাহলে বুঝতে হবে স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও দোসর দের রেখে গেছেন। যেন তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লিটনের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু আগের স্যারেরা সেটা বুঝতে পারেনি। নতুন স্যার এসে বুঝতে পেরেছে। আপনি তো কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি তাই না জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটা খাতা কলমে দেখে বলতে হবে বলেও দাম্ভিকতা দেখান তিনি।
এবিষয়ে ডিজিএম রেজাউল করিম খানের সরকারি মোবাইল নম্বরে কল করে বিষয় টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাজনৈতিক বিবেচনায় কাজ করা হয়নি। সে আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের কামারগাঁ ইউপি সভাপতি কিভাবে পুনর্বহাল করা হল জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তো তার রাজনৈতিক পরিচয় জানিনা। সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছে।